সর্বশেষ

'কুমিল্লায় অর্ধশতাধিক এতিম শিশুর জীবনে প্রথম পিকনিক উজ্জাপন'

প্রকাশ :


/ কুমিল্লায় এতিম শিশুদের নিয়ে পিকনিক /

২৪খবরবিডি: 'মরিয়ম আক্তারের বাবা মারা গেছেন ছোট বেলায়। সেই স্মৃতি তার মনে নেই। মায়ের অন্য জায়গায় বিয়ে হয়ে গেছে। মরিয়ম এখন দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী। বাবা-মা কেউই তার স্মৃতিতে নেই। দেখেনি চেহারা, বাবা-মা বলে ডাকারও সুযোগ পায়নি। দাদির কাছে বড় হতে থাকে সে। দাদির সামর্থ্য নেই তাকে লেখাপড়া শেখানোর। জামাকাপড় ও খাবারের ব্যবস্থা করাই কঠিন।'
 

'কুমিল্লা নগরীর সংরাইশ সরকারি শিশু পরিবারে তাকে রেখে যান দাদি। চান্দিনা উপজেলার কাঠেরপুল এলাকা থেকে কখনও দাদি বা কখনও দাদা এসে দেখা করে যান মরিয়মের সঙ্গে। চতুর্থ শ্রেণি পড়ুয়া জান্নাতের গল্প একই। বাড়ি কুমিল্লা ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদলে। তিন ভাই, দুই বোনের মধ্যে জান্নাত চতুর্থ। বাবা মারা গেছেন। সেই স্মৃতি মনে নেই জান্নাতের। অভাবের সংসার জান্নাতদের। তাই মা সরকারি শিশু পরিবারে দিয়ে যান সন্তানকে। গত চার বছর ধরে জান্নাত শিশু পরিবারে আছে। কারো বাবা নেই। কারো মা নেই। কারো বাবা মা কেউ নেই। কুমিল্লা নগরীর সংরাইশের সরকারি শিশু পরিবারের মরিয়ম-জান্নাতদের গল্প কিছুটা এমনই। সরকার থেকে তাদের লেখাপড়া ও জামা কাপড়ের জন্য যে বরাদ্দ আসে তা দিয়ে দিন পার করে। গত এক যুগের মধ্যে এবারই প্রথম নিজেদের আবাস ছেড়ে বাইরে গিয়ে পিকনিক করেছে এই এতিম শিশুরা। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'জাগ্রত মানবিকতা' তাদের জন্য এই আনন্দ আয়োজন করে।'



/ কুমিল্লায় এতিম শিশুদের নিয়ে পিকনিক /

'সকালে সবাই বাসে চড়ে কুমিল্লা নগরীর ডুলিপাড়ায় অবস্থিত ফান টাউনে যায়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পার্কের ভেতর ট্রেন চড়েছে, বিভিন্ন রাইডে উঠে আনন্দ করেছে। দুপুরে মোরগ পোলাও খেয়েছে। তার আগে কেক কেটে আনন্দ করেছে। ছবি তুলেছে। দোলনায় চড়ে হই হুল্লোড় করেছে। বিকালে বিভিন্ন রকম খেলায় অংশগ্রহণ করেছে। তাই সোমবার দিনটি (১৯ ডিসেম্বর) তাদের কাছে স্মরণীয়।

'কুমিল্লায় অর্ধশতাধিক এতিম শিশুর জীবনে প্রথম পিকনিক উজ্জাপন'

শিশু পরিবারের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী আমেনা আক্তার জানায়, বাবা মায়ের চেহারা কেমন তার জানা নেই। শুধু বান্ধবিদের সঙ্গে চার দেয়ালে কেটেছে তার ১২ বছর। এবারই জীবনের প্রথম পিকনিক তার। সুইটি আক্তার নামের আরেক শিক্ষার্থী বলে, আমি সব রাইডে চড়েছি। গান গেয়েছি দুইটি। আবার বন্ধুদের সাথে একবার নেচেছি। চকলেট পেয়েছি।'

 

'অনেক মজা করেছি। ফান টাউনের জেনারেল ম্যানেজার শাকিল আহমেদ রানা বলেন, এখানে সব সময় কর্পোরেট প্রোগ্রাম হয়। আজ শুধু ব্যতিক্রম আয়োজন ছিলো আমাদের। একদল শিশু আমাদের পুরো পার্কে প্রজাপতির মতো নেচে গেয়ে আনন্দ করেছে। এটা আর ফিরে আসবে কিনা জানি না।' কুমিল্লা সংরাইশ শিশু পরিবারের ডেপুটি সুপারিন্টেন্ডেন্ট শরফুন্নাহার মনি বলেন, সংরাইশ সরকারি শিশু (বালিকা) পরিবারে ৭৬ জন শিশু আছে। সরকার থেকে বরাদ্দ করা আছে খাবার, পোশাক ও লেখাপড়ার খরচ। পিকনিকের জন্য কোনও বরাদ্দ নেই। তাই ইচ্ছে থাকলেও শিশুদের বছরে একবার পিকনিকে নেয়া সম্ভব না। সোমবার তাদের জন্য পিকনিকের ব্যবস্থা করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জাগ্রত মানবিকতা। এই আয়োজনে বাচ্চারা খুবই খুশি। তাদের আনন্দ দেখে বোঝার উপায় নেই এই শিশুদের বাবা-মা নেই। আমি শিশুদের আনন্দে আপ্লুত হয়ে গেছি।'



/ কুমিল্লায় এতিম শিশুদের নিয়ে পিকনিক /

'এতিম শিশুদের জন্য পিকনিকের আয়োজন করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জাগ্রত মানবিকতার প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ডা. তাহসিন বাহার সূচনা বলেন, ২০১৬ সালে জাগ্রত মানবিকতা আর্তমানবতার সেবায় পথচলা শুরু হয়। মুমুর্ষ রোগীদের জন্য রক্ত সংগ্রহ করা হতো। ধীরে ধীরে সংগঠনটি অসহায় শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো, বিভিন্ন এলাকায় শীতবস্ত্র বিতরণের মধ্য দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তিনি জানান, সোমবার ছিল আমার এই সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাবার্ষির্কী। আমরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেই এবার সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করবো এতিম শিশুদের জন্য পিকনিকের আয়োজন করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী এতিম শিশুদের নিয়ে আসি ফান টাউন পার্কে। কেক কেটে হই হুল্লোড় করে এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছি। আমাদের এই অনুষ্ঠানের কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আমার বাবা বীরমুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ও আমার মা কুমিল্লা ডায়াবেটিকস সমিতির সভাপতি মেহেরুন্নেচ্ছা বাহার উপস্থিত থেকে শিশুদের সঙ্গে কেক কাটেন। এই মুহূর্তগুলো আমার কাছে ঐশ্বরিক মনে হয়েছে।'

Share

আরো খবর


সর্বাধিক পঠিত